খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজ খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি যাবেন ৩ উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রতিনিধি দল

বসতবাড়িতে পানি, বিশুদ্ধ পানির সংকটসহ দুর্ভোগে বিল ডাকাতিয়ার মানুষ

একরামুল হোসেন লিপু

বিল ডাকাতিয়ায় বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বছরের অধিকাংশ সময় থাকে জলাবদ্ধতা। এর উপর প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলেই বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পানিতে তলিয়ে যায় মাঠ, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাছের ঘের, ধান-সবজির ফসল। সেই সাথে তলিয়ে যায় বসতবাড়িগুলো।

বর্তমানে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়া বিল ডাকাতিয়ার মানুষগুলো সীমাহীন দুর্ভোগের ভিতর দিন কাটাচ্ছে। শুকনা খাবার, চিড়ে-মুড়ি, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বিল ডাকাতিয়া বসবাসকারী মানুষগুলোর। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর রুটি রুজিও বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতেও দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। যাতায়াতের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিঙ্গি নৌকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে যাতায়াত এবং মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। পানিবন্দী মানুষগুলোর অভিযোগ এ পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি, কোন ব্যক্তিবিশেষ এমনকি সরকারি কোন লোকজন কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি।

বাইপাস সড়কের বড়ইতলাঘাট থেকে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে সরজমিনে বিল ডাকাতিয়ার রংপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ এলাকার সবকয়টি বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরের ভিতর মাজা পানি, হাঁটু পানি। হাঁটু সমান পানির উপর খাটে বসে ছোট বাচ্চা নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় অনেক মা’কে। চোখে মুখে তাদের ভয় আর আতঙ্ক। খাবার পানির টিউবয়েলগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। ডিঙ্গি নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকায় বসবাসকারী মানুষগুলো প্রয়োজনের তাগিদে ঘরের বাইরে যাচ্ছে।

পানিতে চালিয়ে যাওয়া ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর গ্রামের বাসিন্দা লিটন শেখ বলেন, “রংপুর বিল ডাকাতিয়ার এ অংশে আমরা ১৪ টি মুসলমান পরিবার বসবাস করি। গত ৮/১০ দিন ধরে ১৪ টি পরিবারের সবাই আমরা পানিবন্দী অবস্থায় আছি। আমার বাড়িতে মাজা সমান পানি। ঘরে থাকতে পারছি না। স্ত্রী, ছোট দুইটা বাচ্চা নিয়ে দিনের বেলায় রাস্তার পাশে সাঁকোর উপর উঁচু জায়গায় সময় কাটাচ্ছি। রান্না-বান্না, খাওয়া দাওয়া অনিশ্চিত। বাইরে থেকে শুকনো খাবার দাবার কিনে খাইয়ে বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনমতে বাঁইচে আছি। বাচ্চাকাচ্চা, গরু-ছাগল নিয়ে খুব দুর্ভোগের মধ্যে আছি। টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। খাবার পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। আশেপাশে চেয়ে দেখেন সবার একই অবস্থা। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। সহসা পানি সরারও কোন ব্যবস্থা নেই। পানি সরানোর খালগুলো সব বন্ধ হয়ে আছে। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে এখন কি করব? ভ্যাবে কুল কিনারা পাচ্ছিনা। সরকারিভাবে কেউ এখনও আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি”।

একই এলাকার পানিবন্দী এক দুধ ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, “পানিতে সব তলায় গেছে। ডাকাতির বিলি না হলিও ৫০ হাজার পরিবার আছে। সব বাড়িতে বিঘেত খানি পানি উঠিছে। কোন কোন বাড়িতে দুই তিন হাত পানি উঠিছে। ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট কিছুই বাকি নেই। রাস্তায় হাঁটু পানি উঠিছে। যাতায়াতের অবস্থা খুব খারাপ। খাওয়া-দাওয়ার কোন পথ নেই। মানুষজন চিড়ে, মুড়ি শুকনো খাবার খায়ে কোনমতে ব্যাঁচে আছে। অহনে যদি কোন সাহায্য সহযোগিতা আসে তাহলে খাইয়ে বাঁচপানি। তা না হলি না খ্যায়ে মরে যাতি হবেনে। আমি দুধের ব্যবসা করি। গরুর কোন খাদ্য খাবার নেই। সব পানিতে তলায় গেছে”।

রংপুর গ্রামের দীপক সরকার বলেন, “আমাদের রংপুর এলাকার বাড়িঘর সব তলায় গেছে। রান্না-বান্নার কোন জায়গা নেই। ঘরে সাপ পোকের ভয়। ছেলে মেয়ে না খাইয়ে থাকতিছে। অসহায় অবস্থায় আমরা দিন কাটাচ্ছি। রংপুরের মানুষ, ডাকাতিয়ার বিলের মানুষ বড় কষ্টে আছি। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করতিছি। আবার শুনতিছি বর্ষা হবে। এরপর আবার বর্ষা হলি বিলিতো আর থাকার কোন কায়দা থাকবে নারে। না খাইয়ে আরো দিন কাটাতে হবেনে”।

পানিতে তলিয়ে যাওয়া বারান্দায় উঁচু কাঠের পাঠাতানের উপর বসে রান্না করতে দেখা যায় এক মহিলাকে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্ষাকাল আসলেই আমাদের কষ্ট ব্যাড়ে যায়। কি আর করব? গরু ছাগল হাঁস মুরগি সব ডাঙ্গার দিকে নিয়ে গেছি। ছেলে মেয়েও সব ঐদিকে পাঠায় দিছি। রান্নাবান্না খাওয়া দাওয়ার কষ্ট। পায়খানা প্রস্রাব করার জায়গাও সব তলায় গেছে। সাপ, পোকের ভয়। কারেন্টের লাইনও বন্ধ। রাতের বেলা ভয়, আতঙ্কের ভিতর থাকতি হচ্ছে”।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!